বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো জনগনকে সঠিক সার্ভিস দিক অথবা না দিক একটা উন্নতি ঠিকই করেছে, তা হলো-জনগণকে সোস্যাল মিডিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তাদের বিজ্ঞাপনের কল্যানে এখন গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ নিজেদের কোন একটা দেশীয় টিভি চ্যানেল না চিনলেও ফেসবুক ঠিকই চিনতে পারে। প্রথম আলোর রির্পোট অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুকধারীর সংখ্যা আসল-নকল মিলিয়ে প্রায় এক কোটির উপরে। এই সংখ্যা যে দিনে দিনে জ্যামিতিক হারে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।
বেসিস এর “সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং”-এর ক্লাস করে যা বুঝলাম তা হচ্ছে “সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং” একটি গ্রুপ ওয়ার্ক। সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এ সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে ভালো কনটেন্ট, যেমন- টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, ইভেন্ট ইত্যাদি যা কিনা কাষ্টমার এবং ভিজিটিরদের ধরে রাখবে এবং আগ্রহী করে তুলবে। একই সাথে একজনের পক্ষে গ্রাফিক ডিজাইন করা, টাইটেল/আর্টিকেল লিখতে পারা এবং ভিডিও এডিটিং করা সম্ভব নাও হতে পারে। আবার একজন মানুষ যদি এগুলো সব জানেনও তারপরেও তাকে ক্লায়েণ্ট সম্পর্কে জানতে হবে, প্রোপোজাল বানাতে হবে, ক্লায়েন্ট এর সাইট এর জন্য এ্যানালাইসিস করতে হবে, স্টাডি করতে হবে, কখন কোন পোষ্ট দেয়া উচিত তা জানতে হবে, অসুস্থ্য হওয়া যাবেনা, ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে টাকা নিজের পকেটে/একাউন্টে আনতে হবে… আরও কত কি…। এতকিছুর পরেও আপনার আরও একটা বিষয় জানতে হবে, তা হচ্ছে মানুষের সাইকোলজি। মানুষের অ্যাকটিভিটির উপর নিরভর করে আপনি ব্যবসা করতে চাইবেন অথচ মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা, খারাপ লাগা, রাগ, ক্ষোভ, আগ্রহ, বিরক্তি বুঝবেন না তা কি করে হয় ?
ধরা যাক আপনি অনেক প্রেশার নিতে পারেন এবং উপরোক্ত প্রয়োজনীয় সব কাজগুলো একাই করতে পারেন এবং মানুষ ও তার সাইকোলজিকে বুঝেন একদম পানির মতো করে। এতে করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়তো পকেটে টাকা বাড়বে কিন্তু সাথে সাথে চুলে পাঁক ধরা, কপালে বলি রেখা, নির্ঘূম লাল চোখ, পরিচিত মানুষগুলোর সাথে সামাজিক দূরত্ব আর হাইপার টেনশনটাও ঠিকই বাড়বে। এত কষ্ট স্বীকার করার পরেও আগামী দুই বছর পর সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এ আপনার নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড তৈরী হবে তার নিশ্চয়তা কি দেয়া যাবে ??
তারচেয়ে ভালো এমন একটি গ্রুপ তৈরী করা যেখানে কমপক্ষে নিচে উল্ল্যেখিত অভিজ্ঞ মানুষগুলো থাকবেন-
আর্টিক্যাল রাইটার:
যিনি কিনা জানবেন কিভাবে লিখলে মানুষ পড়তে আগ্রহ বোধ করবে। মানুষের এখন সময় খুবই কম, তাই কত কম লেখাতে পুরো বিষয় ফলোয়ার/ভিজিটরকে জানানো যায়। অন্যের লেখা কপি করে ব্যবসা করার দিন শেষ হয়ে আসছে। সামনের দিকে চুরি করতে হলেও বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
গ্রাফিক ডিজাইনার:
গ্রাফিক ডিজাইনার ভিজুয়াল এলিমেন্ট নিয়ে কাজ করবেন। কখন, কোথায় কোন পোষ্টে কি ধরনের ইমেজ ব্যবহার করতে হবে, টাইপোগ্রাফি, কালার, সাইজ, রেজুলেশন কেমন হবে, কোন পোষ্টের জন্য কোন ডিজাইনটা ভালো হবে তা নিয়ন্ত্রন করবেন। একজন ভালো গ্রাফিক ডিজাইনার আপনার গ্রুপের পোষ্টগুলোকে সর্বোচ্চ সময় ভিজিটর এর চোখের সামনে রাখবে এবং ইউনিক কনটেন্ট তৈরীর মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানকে এবং আপনার ক্লায়েন্ট এর প্রতিষ্ঠানকে কপিরাইট আইন ভঙ্গের ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখবে।
ভিডিও এডিটর:
আজকের দিনে ভিডিও ছাড়া মার্কেটিং কল্পনা করা যায়না। একজন ভিডিও এডিটর ক্যামেরা ছাড়াও সফটওয়্যার-এ শুধুমাত্র টেক্সট, কালার, গ্রাফিকাল এলিমেন্ট দিয়ে কম খরচে আকর্ষনীয় ভিডিও বানাতে পারে। এছাড়া স্মার্ট ফোনের বদৌলতে ঘরে বাইরে সব জায়গাই এখন স্যুটিং স্পট। তাই একজন ভিডিও এডিটর আপনার সাথে থাকা মানে হচ্ছে গ্রুপের এবং ক্লায়েন্টের ভিডিও চ্যানেলগুলোতে পোষ্টের সংখ্যা বাড়তে থাকা।
সোস্যাল মিডিয়ার মার্কেটিং ম্যানেজার:
এই ভাইয়ের কাজ বেশি। কারণ উনি মার্কেট, বর্তমান পরিস্থিতি, পরিসংখ্যান বিবেচনা করে সঠিক, কার্যকর পোষ্টের প্ল্যান তৈরী করবেন এবং একাউন্টগুলোকে যথাযথভাবে সাজানো এবং মনিটরিং করবেন। কখন, কোথায়, কার জন্য, কেন, কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো বের করবেন এবং উপরোক্ত তিনজনের কাজকে সমন্বিত করে সময়মতো সঠিকস্থানে পোষ্ট দিবেন। তার সেন্স অব হিউমার ভালো হওয়া ছাড়া গতি নাই। তিনি কাজের রুটিন নিয়ন্ত্রন, ভিজিটর কন্ট্রোল, ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা এবং গ্রুপের ব্র্যান্ডকে দিনে দিনে পরিচিত করে তুলবেন। একজন সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা ও অ্যাকটিভিটি ঠিক করে দিবে যে তার পরিচালিত সাইটগুলোতে ভিজিটর কেন আসবে, কি দেখবে, কতক্ষন থাকবে এবং কি অ্যাকটিভিটি রেখে যাবে।
মার্কেটিং এবং প্রেজেন্টার:
শুরুতে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষ না হলেও চলে। তবে মার্কেটিং এবং প্রেজেণ্টেশন এ অভিজ্ঞ একজন মানুষ আপনার অচেনা, অদৃশ্য ক্লায়েন্টদের আপনার কাছে নিয়ে আসবে আপনার ব্রান্ড অথবা ব্যবসার প্রসার ঘটাবে। আপনাদের গ্রুপের ব্র্যান্ড এর স্থায়িত্ব এবং ভিত্তি মজবুত করবে।
চল্লিশটা বিষয় অল্প স্বল্প জানার চেয়ে নির্দিষ্ট একটি বিষয় ভালোভাবে জানা শতগুনে ভালো। গ্রুপ ওয়ার্কের সুবিধা হচ্ছে কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। এতে মেধার অপচয় কম হয় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। নিজের বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষগুলো নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে। সর্বোপরি গ্রুপ ওয়ার্কে টু-ডু লিষ্ট, ডিসকাস, প্ল্যান, স্টাডি, কাজের লোড এবং রিস্ক শেয়ার করবার যথেষ্ঠ সুযোগ থাকে।
আপনি কি করতে পারেন এবং কি করতে যাচ্ছেন? আগামী দুই বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান? আপনি কি দেখতে পছন্দ করেন? পড়তে পছন্দ করেন? জানতে পছন্দ করেন? চিন্তা করতে পছন্দ করেন? আপনার ইচ্ছে, যোগ্যতা এবং চেষ্টাই নির্ধারন করে দিবে যে অদূর ভবিষ্যতে আপনি কি হতে যাচ্ছেন অথবা কি করতে যাচ্ছেন, “সোস্যাল মিডিয়ার মার্কেটিং ম্যানেজার?” নাকি “সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অপারেটর?” পছন্দ আপনার।